চলনবিলের স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যক্ষ এম এ হামিদ

এম এ হামিদ বাংলাদেশের নাটোর জেলার একজন শিক্ষাবিদ, গবেষক, লেখক এবং সমাজ সংস্কারক। তার পুরো নাম সরদার মোহাম্মদ আবদুল হামিদ । চলনবিলের এই আলোর মশালের অনুপম সান্নিধ্যে ধন্য হয়েছে এ জনপদের মানুষ। মহৎ প্রাণের এই মানুষটি বেঁচে থাকবেন তাঁর অবিনাশী কীর্তির মাঝে। 

এই মহান ব্যক্তিটি ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী, প্রকৃতিপ্রেমি সহ অগণিত গুণের অধিকারী । তবে এতএত গুন ও ব্যস্ততার মাঝে ও তিনি তাঁর শিশুসুলভ মনটাকে কখনও হারিয়ে যেতে দেননি।অন্যদিকে, আধুনিকতা আর ধর্মীয় অনুশাসনের এক অদ্ভুদ মেলবন্ধন ছিল তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট। তিনি তাঁর স্বপ্নীল জীবনের বর্ণিল ঘুড়িটাকে কতটা রঙিন করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন বা বিশ্বের কোন প্রান্ত থেকে কোন প্রান্ত পর্যন্ত তার সেই ঘুড়ি বিস্তার লাভ করেছিল তা স্বল্প পরিসরে লেখা সম্ভব না।

এম. এ. হামিদ ছিলেন সরকারী কলেজের প্রিন্সিপাল । ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়নে মাস্টার্স করলেও তিনি ছিলেন সাহিত্যানুরাগী। ছাব্বিশটা বই এর লেখক তিনি। সে সময় তার লেখা রসায়ন বই ছাত্র ছাত্রীরা পাঠ করতো। এখনও ‘চলনবিলের ইতিকথা’ বইটি রাজশাহী ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিষয়ের ছাত্র ছাত্রীরা পাঠ করে, গবেষণার কাজে ব্যবহার করেন হাজারো গবেষক।

দেশ ভ্রমণ তার প্রিয় শখ ছিল। অনেকগুলো দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং সেসব ভ্রমণের ওপর বইও লিখেছেন । ভ্রমনের আগ্রহের কারনে ৫/৬ টি দেশের ভাষায় কথা বলতে জানতেন। এছাড়াও লিখেছিলেন আত্মজীবনীমূলক বই। ছোটদের জন্য লিখেছিলেন মজার অংক ও জ্ঞান বিজ্ঞানের বই।

জন্ম ও বাল্যকাল

সরদার মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ১৯৩০ সালের ১লা মার্চ নাটোর জেলার অন্তর্গত গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব মোঃ দবির উদ্দিন সরদার। পিতা আলহাজ দবির উদ্দিন সরদার ছিলেন চলনবিল অঞ্চলের একজন দানশীল ব্যবসায়ী। মাতা ডালিমজান  ছিলেন গৃহিনী। দাদার নাম জহির উদ্দিন সরদার এবং নানার নাম লাল মন্ডল। তার ভাইয়েরাও ব্যবসায়িক ও পেশাগত পরিচয়ে দেশে-বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত।

তাঁরা প্রতিটি ভাই অনন্য মেধাবী ছোট ভাই ড. সোহরাব আহসানউল্লাহ (BUET) প্রকৌশল কলেজের শিক্ষক এবং অধ্যক্ষ ছিলেন পরবর্তীকালে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় এর ফ্যাকাল্টি। তার আরেক ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. সিরাজুল ইসলাম মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ব্যাক্তিগত চিকিৎসক । ফ্লোরিডা তে বিখ্যাত Gastroenterologist । আরেক ভাই এস এম শরিফুল আলম আমেরিকান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিউইয়র্ক এর কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হিসেবে তিন দশকের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে পরিবার নিয়ে নিউইয়র্কে অবসর জীবনযাপন করছেন।

তিনি যখন যোগেন্দ্রনগর ১ নং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র তখন তার নানা ডাঃ দিল মোহাম্মদ মিয়ার ডাক্তার খানায় হালখাতা করতে যান। সেখানে হঠাৎ তার কৌতুহলী চোখদুটো আটকে যায় “সাপ্তাহিক মোহাম্মদী” পত্রিকায়। জীবনে প্রথম খবরের কাগজের সাথে পরিচিত হবার পর তিনি তার নানার কাছে জানতে পারেন খবরের কাগজ পড়লে অনেক জ্ঞান হয়।

ব্যাস, এই থেকে শুরু হল এক জ্ঞান পিপাসু বালকের জ্ঞান অর্জনের নিমিত্তে আজীবন ছুটে চলা। যে বয়সে গ্রামের আর দশটা বালক নদীতে সাঁতার কেটে কিংবা মাছ ধরার নিত্যনতুন কৌশল আবিস্কারে মগ্ন অথবা কাবাডি, হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্ধা খেলার কৌশল রপ্ত করতে ব্যস্ত সে সময় এই বিষ্ময়কর বালক প্রতি সোমবার বিদ্যালয় ছুটির পর খুবজিপুর হতে গুরুদাসপুর পোস্ট অফিসে যাতায়াতে মোট ছয়মাইল হেঁটে সেই পত্রিকা জোগাড় করতেন। এরপর সারা সপ্তাহ জুড়ে কয়েকবার করে পড়তেন সেই পত্রিকার প্রতিটি লাইন। এভাবে শুরু হয়ে নিরলস গতিতে আজন্ম চলেছে তাঁর সাধনা, তবে তাঁর জীবদ্দশায় তিনি শুধু নিজের জ্ঞান অর্জনেই সচেষ্ট থেকেছেন তা কিন্তু নয়, বরং তাঁর আজন্ম লালিত চলনবিলের অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর জমাট বাঁধা অন্ধকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সেখানেও তিনি জ্ঞানের আলো, শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছেন।

আত্রাই নদীর ছোট্ট একটি শাখা। ছোট ছোট তিনটি গ্রাম পেড়িয়ে চলনবিলে বিলীন হয়েছে। তিনটি গ্রামের মধ্যবর্তী গ্রামের নাম খুবজীপুর। নদীর দুই পাড়ে কিছু বসতি বাকিটুকু জলাভূমি, কৃষক এবং কৃষি জমিতে বেগার খাটা দরিদ্র শ্রমিকরা গ্রামের সদস্য। গ্রামে ছিল না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার। এমনকি কোন রাস্তা!

এমন একটা গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন আলোকবর্তিতা হয়ে। সমাজের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, এই প্রেরণায় স্কুল থেকে শুরু করেছিলেন চিঠি লেখা। উপজেলা সদরের ডাকঘরে হেঁটে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পত্রিকায় চিঠি লিখতেন। মানুষের সান্নিধ্যে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত তিনি চেষ্টা করতেন সবার মধ্যে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের বীজ বপন করতে। অনেকে উনাকে পাগল ভাবত! কিন্তু কোন সমালোচনা উনাকে থামাতে পারে নি কখনো । 

অসম্ভব পরিশ্রমী এই ব্যক্তিটির জীবন-অভিধানে অবসর বা বিশ্রাম শব্দটা ছিলনা কোন কালেই, বিশ্রামের কথা উঠলে তিনি বলতেন,” বিশ্রাম একবারই নেব।মরার আগে আর বিশ্রামের দরকার কি?”

পরিবার

এম এ হামিদ যখন পঞ্চম শ্রেনির ছাত্র তখন পিতা আলহাজ্ব দবির উদ্দিন সরদার শখ করে গ্রামের আলহাজ্ব মতি সরদারের কন্যা কুলছুম বেগমের সাথে বিয়ে দেন। অনেকেরই ধারনা ছিল বিবাহের কারণে তার পড়া -লেখার ক্ষতি হবে। কিন্ত হামিদ সাহেব সে ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে সকলকে তাক লাগিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ করেন। তিনি স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত আট কন্যা সন্তানের  গর্বিত পিতা। মেয়েদেরকে তিনি সুশিক্ষিত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলেছেন ।

শিক্ষাজীবন

এম এ হামিদ বাড়ির পাশের গ্রাম যোগেন্দ্রনগর ১নং প্রাইমারি বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেনি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। অতঃপর তিনি  গুরুদাসপুর জিসিএমই স্কুলে পঞ্চম শ্রেনিতে ভর্তি হন  ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারী মাসে। গুরুদাসপুর জিসিএমই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেনি পর্যন্ত  পড়ে তিনি ১৯৪১ সালে গুরুদাসপুর-তাড়াশ ও বড়াইগ্রাম থানায় সর্ব প্রথম প্রতিষ্ঠিত চাঁচকৈড় নাজিমুদ্দিন হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন।

১৯৪৫ সালে গুরুদাসপুরের মাটিতে প্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন । ১৯৪৭ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি (বিজ্ঞান) দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডিগ্রী পরিক্ষায়  প্রথমস্থান অধিকার করে ডিসটিংশনসহ  বিএসসি পাশ করেন এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে ২য় শ্রেণিতে ৫ম স্থান অধিকার করে এমএসসি পাস করেন।

কর্মজীবন

এম এ হামিদ এমএসসি পরিক্ষার ফল প্রকাশের পুর্ব পর্যন্ত ১৯৫৩ সালের শুরু থেকে ঢাকা জেলার কেরানিগঞ্জ থানার কলাতিয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন।

পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগস্ট সাতক্ষীরা কলেজে রসায়নের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।

তিন মাস পর ১৯৫৩ সালে ৫ নভেম্বর সাতক্ষীরা কলেজ ছেড়ে ৬ নভেম্বর গাইবান্ধা  কলেজে যোগদান করেন।

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ নভেম্বর রংপুর কারমাইকেল কলেজে যোগদান করেন।

পরের বছর ১৯৫৬ সালের ৩ জুলাই পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ নলিনীরঞ্জন রায় মহাশয়ের আহবানে রংপুর কারমাইকেল কলেজ ছেড়ে পরদিন ৪ জুলাই পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে রসায়নের প্রভাষক পদে যোগদান করেন।

একটানা ১৪ বছর তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ  সরকারিকরন হলে ঐদিন হতে এম এ হামিদ সরকারি কর্মচারি হিসেবে রসায়ন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তিনি যশোর মাইকেল মধুসুদন কলেজে রসায়ন বিভাগে সহকারি অধ্যাপক পদে যোগদান করেন।

১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন যশোর মাইকেল মধুসুদন (এম এম কলেজ) কলেজ ছেড়ে পরদিন সরকারি কারমাইকেল কলেজে যোগদান করেন।কারমাইকেল কলেজে যোগদানের ২০ দিন পর মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধরে তার প্রতিষ্ঠিত তার পাঁচবিবি থানার মহিপুর হাজী মহসীন কলেজে সরকারি ডেপুটেড অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মাওলানা ভাষানী নিজ হাতে  এম এ হামিদকে চিঠি লিখেন তার কলেজে যোগদানের জন্য। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুলাই  কারমাইকেল কলেজ থেকে বিদায় নিয়ে পরদিন ৮ জুলাই জয়পুরহাট মহীপুর হাজী মহসীন কলেজে যোগদান করেন।

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই মহীপুর হাজী মহসীন কলেজ থেকে বিদায় নিয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের রসায়ন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক  পদে যোগদান করেন। একাদিক্রমে টানা দশ বছর এই কলেজে রসায়ন বিভাগীয় প্রধান, উপাধ্যক্ষ, ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ বগুড়া আযিজুল হক কলেজ থেকে বিদায় নিয়ে পরদিন বগুড়া সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজে  অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন।

১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারী এই কলেজ থেকে এলপিআরে যান এবং ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ফেব্রুয়ারী অধ্যক্ষ এম এ হামিদ চাকুরি জীবন থেকে পূর্ণ অবসর গ্রহণ করেন। চাকরি জীবনের ইতি টানলেও শিক্ষা, সমাজসেবা, মানবসেবার প্রতি তার প্রীতি কমেনি, বরং বেড়েছে প্রতিনিয়ত। তার চিন্তা চেতনায় আমৃত্যু চলনবিলের মাটি ও মানুষের প্রতি ছিল অগাধ টান।

লেখালেখি

তিনি ছিলেন পত্রিকা ও সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। লেখালেখি, প্রকাশনার সাথে তার ছিল সতত পথচলা। অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ সাংবাদিকতাতে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালে বৃহত্তর চলনবিলের উদীয়মান সাংবাদিকদের নিয়ে গুরুদাসপুরে “ চলনবিল প্রেসক্লাব” প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তার সম্পাদনায় বেশ কয়েকটি পত্রিকা, সাময়িকী, ম্যাগাজিন ও সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ‘ মাসিক আমাদের দেশ পত্রিকার প্রকাশক ও কার্যকরী সম্পাদক,বার্ষিক অভিযান ও সোপান পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক। এতদ্ব্যতীত চলনবিল, চলনবিলের ঢেউ, অভিযান ও সোপান পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের তিনি সভাপতি ছিলেন।

পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটা থেকে প্রকাশিত ‘বোলানের ডাক’, বড়াইগ্রাম থানা সমাজসেবা সংঘের মুখপত্র ‘নয়াজিন্দেগী’, মাসিক ‘নবারুণ’, পাকিস্থানের লয়ালপুর থেকে প্রকাশিত উর্দু মাসিক ‘হামারা ওয়াতান’, লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইংরেজি মাসিক ‘আওয়ার হোম’ এবং দৈনিক ‘পয়গাম’ পত্রিকার সঙ্গে নিবিড় ভাবে সংযুক্ত ছিলেন।

সাহিত্যকর্ম

তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৬ টি। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘চলনবিলের ইতিকথা’ তার ইতিহাস নির্ভর ও প্রচুর তথ্য সম্বলিত একটি অনন্য গবেষণামূলক গ্রন্থ, যা পাঠক, লেখক গবেষকদের কাছে এখনো পরম আদৃত । রসায়ন পাঠকে সহজ করার জন্য লিখেছেন রসায়নের তেলেসমাতি । তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে

  1. ‘বঙ্গাব্দ সমাচার’,
  2. ‘দেখে এলাম অস্ট্রেলিয়া’,
  3. ‘পশ্চিম পাকিস্তানের ডাইরি’,
  4. ‘পাশ্চাত্যের বৈশিষ্ট্য’,
  5. ‘জ্ঞানের মশাল’,
  6. ‘চলনবিলের লোকসাহিত্য’,
  7. ‘কর্মবীর সেরাজুল হক’,
  8. ‘আমাদের গ্রাম’,
  9. ‘শিক্ষার মশালবাহী রবিউল করিম’,
  10. ‘পল্লী কবি কারামত আলী’,
  11. ‘ইসলামের ছায়াতলে’,
  12. ‘স্বপ্নীল জীবনের কিছু কথা’,
  13. ‘হজ্বের সফর’,
  14. ‘রসায়নের তেলেসমতি’,
  15. ‘আমাদের গ্রাম’,
  16. ‘ধাঁধাঁর জগত ও অংকের খেলা’,
  17. ‘ইসলামের ছায়াতলে’,
  18. ‘স্বপ্নীল জীবনের কিছু কথা’,
  19. ‘অমর জীবন কাহিনী’,
  20. ‘অবিস্বরনীয় প্রাণ’,
  21. ‘আদর্শ শিক্ষক’,
  22. ‘অমর স্মৃতি’
  23. ‘মনোহর চয়নিকা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

নাটোর জেলার আরেক প্রতিভাবান লেখক ও ঐতিহ্য-গবেষণার প্রাণপুরুষ সমর পালের জীবনী পাবেন এখানে

উল্লেখযোগ্য কর্ম

অধ্যক্ষ এম এ হামিদের অনেক কৃতিত্বের মধ্যে আরো একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য হচ্ছে“,বঙ্গাব্দ সংস্কার প্রস্তাব ”। বাংলা সনের বিভিন্ন মাসের দিন সংখ্যা নির্দিষ্ট না থাকায় বাংলা তারিখের হিসাব ঠিক রাখা; ডাইরি, ক্যালেন্ডার ও পঞ্জিকা তৈরিতে অত্যন্ত অসুবিধা দেখা যেত। এই অসুবিধা দূর করার লক্ষ্যে শিক্ষাবিদ আব্দুল হামিদ ১৯৫৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকাস্থ বাংলা একাডেমিতে ‘বাংলা বিভিন্ন মাসের দিন সংখ্যা’ নির্দিষ্ট করার  একটি প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর বাঙলা একাডেমির ৪৯ তম সভায় ‘ বাঙলা সনের বিভিন্ন মাসের তারিখ নির্ধারণ উপসংঘ’ গঠিত হয়। এই উপসংঘের সম্মানীত সদস্য ছিলেন-

১) এম এ কাসেম, অধ্যক্ষ , বাংলা কলেজ ,ঢাকা  এবং কাংলা একাডেমীর কার্যকরী কমিটির সদস্য

২) পন্ডিত তারাপদ ভট্রাচার্য, কাব্য-ব্যাকরণ- পুরান- স্মৃতিতীর্থ, ভাগবতশাস্ত্রী, হিত্যপাধ্যায়,স্মৃতিপুরানরত,জ্যোতিশাস্ত্রী (বাংলা একাডেমীর সংকলন বিভাগীয় সহ অধ্যক্ষ) কমিটির আহবায়ক।

পরে ১৯৬৩ সালের ১০ জুন  ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে সভাপতি, বাংলা একাডেমির পরিচালক সৈয়দ আলী আহসান ও আরো ২ জন জ্যোতির্বিজ্ঞানী পন্ডিত শতীষচন্দ্র শিরোমনি ও পন্ডিত অবিনাশচন্দ্র কাব্য জ্যোতিস্তীর্থকে  সদস্যরূপে উপসংঘে গ্রহণ করা হয়।

১৯৬৩ হতে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত উপসংঘের বিভিন্ন সভায় প্রস্তাবটি নিয়ে গভীরভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও আলোচনা করা হয়। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সভায় প্রস্তাবক অধ্যাপক এম এ হামিদ আমন্ত্রিত অতিথিরূপে যোগদান করেন এবং প্রস্তাবটির ব্যাখ্যা প্রদান করেন। পরিশেষে তার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিতে হুবহু গৃহীত হয়। বর্তমানে এম এ হামিদ কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী বঙ্গাব্দের তারিখের হিসাব , ডাইরী, ক্যালেন্ডার ও পঞ্জিকা তৈরী করা হয়।

বাংলা সনের সংস্কারে তার উত্থাপিত প্রস্তাবটি ১৯৬৬ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নিরীক্ষা কমিটির সভার সুপারিশ সাপেক্ষে বাংলা একাডেমি কর্তৃক অনুমোদনক্রমে স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার ওই প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। তারই প্রেক্ষিতে বৈশাখ হতে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাস ৩১ দিনে এবং আশ্বিন মাস হতে চৈত্র মাস ৩০ দিনে গণনা করা হয়ে থাকে।

তিনি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সাথে বাংলা সন চালুর জন্য ব্যাপক আন্দোলন করে এরশাদ সাহেবকে দিয়ে ১৪ ই এপ্রিল কে constant ধরে নূতন বাংলা সন চালু করেন । আগে আষাঢ় মাস হতো ৩৩ দিনে, যা এখন আর হয়না ।

অসীম ধৈর্যের সঙ্গে গড়েছেন একের পর এক প্রতিষ্ঠান। নাটোর নবাব সিরাজউদদৌলা কলেজ, গুরুদাসপুর শহীদ শামসুজ্জোহা কলেজ, চাঁচকৈড়ে সেসময় দেশের অন্যতম বৃহত্তম হল রুমসহ লাইব্রেরি ও ক্লাব ‘শিক্ষা সংঘ’। খুবজীপুরে করেছেন স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, খেলার মাঠ, হাট-বাজার, জাদুঘর। একইসাথে সমগ্র চলনবিলের প্রত্যন্ত গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে ছিলেন শিক্ষার আলো। শুধু ওই একটি মশাল চলনবিলের মানুষের কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করে ভাগ্য ফিরিয়েছিল।

তাছাড়া, তিনি চলনবিল অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে একটি জাদুঘর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বেসরকারি উদ্যোগে অস্থায়ীভাবে যাত্রা শুরু হয় চলনবিল জাদুঘরের। ১৯৮৯ সালের ২ জুলাই জাদুঘরটি প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের আওতায় আসে।

সমাজসেবা

শিক্ষবিদ অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ ছিলেন একজন নিভৃতচারি আপদমস্তক ক্লিন ইমেজের প্রকৃত সমাজসেবক। তিনি বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা।

অধ্যক্ষ এম এ হামিদ দীর্ঘ শিক্ষকতা চাকরি থেকে অবসর গ্রহনের পর ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে  নিজ গ্রমে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ খুবজিপুর মোজাম্মেল হক কলেজ’। এছাড়া  তিনি নাটোর নবাব সিরাজ- উদ- দৌলা কলেজের প্রথম উদ্যোক্তা এবং গুরুদাসপুর বিলচলন  ডক্টর শহীদ শামসুজ্জোহা কলেজের (বর্তমানে সরকারি) প্রতিষ্ঠাতা- সম্পাদক ছিলেন।

১৯৬৫  খ্রিস্টাব্দে নিজ গ্রামে খুবজীপুর হাই স্কুল,

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে খুবজীপুর পোস্ট অফিস,

১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে খুবজীপুর দারুল উলুম এবতেদায়ী মাদ্রাসা,

১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে খুবজীপুর হাট,

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে খুবজীপুর নুরুন্নবী জামে মসজিদ,

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে গুরুদাসপুর থানা শিক্ষা সংঘ,

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে খুবজীপুর ইউনিয়ন  স্বাস্খ্য ও পরিবার কল্যানকেন্দ্র,

১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে খুবজীপুর ইউনিয়ন,

১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে খুবজীপুর দবিরুল দাখিল মাদ্রাসা,

১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে মদিনাতুল উলুম ট্রাষ্ট

১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে বায়তুস সালাম জামে মসজিদ  স্থাপন করেন।

এছাড়াও তিনি এলা্কার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ- কালভার্ট, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রষ্ঠিান  প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভুকিা রেখেছেন।

শিশুতোষ মানুষটি ব্যক্তি জীবনে ছিলেন সাদামাটা, নির্লোভ,নিরহংকার। রসায়নের অধ্যাপক হয়েও শিল্প-সাহিত্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্ম, ফোকলোর গবেষণা, এবং সাংস্কৃতিক কাজে ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। এসব নিয়ে উনার রচিত সম্পাদিত ২৬টি বই তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্যের সাক্ষ্য দেয়। ধবধবে সাদা পাজামা পাঞ্জাবির সাথে কালো চপ্পল, শীতে শেরওয়ানি সঙ্গে শুভ্র দাঁড়িতে হাসি মাখা মুখ। অতি সাধারনের এই মিশেল তাঁকে সহস্র ভীড়ের মাঝে অসাধারণ করে তুলতে পারত। কোন বড় অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষ যখন কাছে যেতে সংকোচ করত। তখন উনাকে দেখতে পেলে মানুষ ভরসা করত। হাসিমুখে সব শ্রেণীর মানুষ কে কাছে টেনে কথা বলার গুণ উনার প্রবলভাবে ছিল।

জীবনভর সফর করেছেন, পকেটে এড্রেসবুক থাকতো। পথ চলায় যাকে পাশে পেতেন যেচে পরিচিত হয়ে ঠিকানা নিয়ে রাখতেন পরে চিঠি পাঠাতেন। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাবার আগে চিঠি লেখা ও চিঠির উত্তর পাঠানো ছিল তাঁর রুটিন কাজ। দাওয়াত খাওয়াতে এবং খেতে পছন্দ করতেন। একা খেতে পারতেন না, যেদিন মেহমান থাকতো না সেদিন খুব আফসোস করতেন। রাস্তা থেকে মানুষ ধরে আনতেন একসাথে খাবার জন্য।

সমাজসেবার জন্য ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হবার সুযোগ পেয়েও জয়েন করেননি। নিজ এলাকা চলনবিলের উন্নয়নে একাগ্রচিত্তে কাজ করবার বাসনায় উত্তরাঞ্চলের কলেজে জয়েন করেন। ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলে আব্বার আরও কত নাম দাম হতো!কিন্তু তিনি কখনও নাম দাম অর্থ বিত্ত চাননি। ধনীর সন্তান হয়েও নিজের জন্য বেশি খরচ করতেন না। বাড়ি থেকে যা টাকা পয়সা পেতেন তার বেশির ভাগ তিনি খরচ করতেন দরীদ্র ছাত্রদের পেছনে। রসায়নের মত বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন। ছাত্র ছাত্রীরা প্রাইভেট টিউশনীর জন্য কত অনুরোধ করতো। তাতে কখনও রাজী হননি। অর্থের লোভ থাকলে টাকার পেছনে ছুটতে পারতেন। সরকারি কলেজ থেকে অবসর গ্রহনের পর অনেক বেসরকারী কলেজ থেকে অধ্যক্ষ হবার প্রস্তাব পান। দেশের জন্য কাজ করবার বাসনায় সে সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

তার চিন্তা চেতনা সব ছিল দেশের জন্য উৎসর্গীকৃত। যখন যে কলেজে বা যে এলাকায় অবস্থান করতেন, তার আমূল পরিবর্তন করে ফেলতেন। চলনবিলস্থিত আমাদের গ্রামে এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যা তিনি প্রতিষ্ঠা করেননি। তার প্রতিষ্ঠিত যাদুঘর আজ সরকারী হয়ে গেছে।গ্রামের ঐ এলাকাটি তার নামানুসারে ‘এম এ হামিদ কমপ্লেক্স’ নামকরণ করা হয়েছে।

তিনি চিরকালই প্রচার বিমুখ ছিলেন। নিরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন। এমন কোন ব্যক্তি নেই যে কোন সমস্যা নিয়ে এসে তার দ্বারা উপকার পাননি। প্রচুর মানুষ বিভিন্ন উপকার লাভের আশায় আমাদের বাড়ি আসতেন। আমাদের ড্রইং রুমে একটি ডাইরী রাখা থাকতো। তার অবর্তমানে কেউ এসে তাকে না পেয়ে ফিরে গেলে ঐ ডাইরীতে তার নাম ঠিকানা ও আসবার উদ্দেশ্য লিখে রেখে যেতেন। উপকার করবার কেমন ইচ্ছা থেকে এটা করতেন তা সহজেই অনুমেয়। গ্রামের দরিদ্র মেধাবীদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করবার জন্য এম এ হামিদ বৃত্তি প্রদান করা হয়।

পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট’স অ্যাসোসিয়েশন অব নাটোর-বাংলাদেশ-(PUSAN) কর্তৃক গুরুদাসপুরের গর্ব অধ্যক্ষ এম এ হামিদ স্যারের নামে অধ্যক্ষ এম এ হামিদ অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন।

সমাজ সেবক হিসেবে গ্রামের মানুষ তাকে রাজনীতিতে যোগদানের প্রস্তাব দেন। সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করবার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি নাম যশ চাননি বা তথাকথিত ক্ষমতা চাননি তাই সে সব প্রস্তাবও প্রত্যাখান করেন।

স্বীকৃতি

গবেষণা ও সমাজসেবামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এম. এ. হামিদকে ‘তমঘায়ে খেদমত (টি.কে.)’ খেতাব ও স্বর্ণপদক দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের রিডার ড. শামসুজ্জোহার হত্যার প্রতিবাদে তিনি টি.কে. খেতাব বর্জন করেন। ১৯৬৯ সালেই শহীদ শামসুজ্জোহার স্মৃতির স্বরণে তার উদ্যোগে গুরুদাসপুর পৌর সদরে ‘বিলচলন শহীদ শামসুজ্জোহা কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ শিক্ষা,সাহিত্য, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখায় বহু পুরস্কার খেতাব ও সনদ লাভ করেছেন। এরমধ্যে-

  • ১৯৭৬ সালে জয়পুর হাট হিলফুল ফুজল হতে ‘ প্রাইড অব পারফরমেন্স’,গবেষনা ও সমাজসেবামুলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তদানিন্তন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট  তমঘায়ে খেদমত ( টি.কে)  খেতাব ও স্বর্ণপদক দিয়েছিলেন ( কিন্তু  ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের রিডার ড. শামসুজ্জোহার হত্যার প্রতিবাদে তিনি টি. কে খেতাব বর্জন করেন)।
  • ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী বরেন্দ্র একাডেমি থেকে সাহিত্য সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ সংবর্ধনা  এবং সনদ লাভ করেন।
  • ১৩৮৭ বঙ্গাব্দে সিরাজগঞ্জ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ হতে গবেষনামুলক ইতিহাস রচনার জন্য ‘ গবেষনা বিশারদ’ খেতাবে ভষিত হন।
  • ১৯৯২ সালে পাবনা জেলা পরিষদ হতে পল্লীরত্ন পুরস্কার পান।
  • ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে বগুড়ার সাপ্তাহিক জীবন পত্রিকার সাহিত্যিক গোষ্ঠ প্রদত্ত জীবন সাহিত্য পুরস্কার পান।
  • ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে পাবনার কাশিনাথপুর হতে সাহিত্য অঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য উত্তরন পুরস্কার ও সংবর্ধনা পান।
  • ১৯৯৪ সালে সিরাজগঞ্জ কবিতা ক্লাব হতে সিরাজী পুরস্কার পান।
  • ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ কবিতা ক্লাব , পাবনা জেলা শাখা হতে  কবি বন্দে আলী পুরস্কার পান।
  • ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে নাটোর ভিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরি প্রদত্ত  ভিক্টোরিয়া সাহিত্য পুরস্কার পান।
  • ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ বগুড়া বারোয়ারী আসর কর্তৃক প্রদত্ত সংবর্ধনা, পদক ও পুরস্কার লাভ করেন
  • ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে  সিরাজগঞ্জ যমুনা সাহিত্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত বিদ্যভুষন পুরস্কার লাভ করেন।
  • ২০০২ সালে সমাজ সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ International Biographical Center of America (IBC)থেকে তাকে ‘Man of the year’ নির্বাচন করা হয়। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের জন্য গৌরবের বিষয়।

চলনবিলের ইতিকথা

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘চলনবিলের ইতিকথা’ তার ইতিহাস নির্ভর ও প্রচুর তথ্য সম্বলিত একটি অনন্য গবেষণামূলক গ্রন্থ। চলনবিলের ইতিকথা শুধু তার বই নয়, একটি ব্রত। সম্প্রতি ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হার্ডকপি বইটি পড়তে পরতে গিয়ে অবাক হয়েছি, তথ্যের ব্যাপকতা ও উপস্থাপনার ধরণ দেখে। ৫৫ বছরের পুরনো হলেও বইটি চলনবিল এলাকা সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য সমৃদ্ধ এক জ্ঞানের খনি।

মৃত্যুর পুর্বমুহুর্ত পর্যন্ত তিনি স্বপ্নের চলনবিল গড়ার কাজে আমৃত্যু যুদ্ধ করে গেছেন।শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তিনি বিশ্বাস করতেন তঁার স্বপ্নের চলনবিল একদিন ‘ চলনবিল জেলা’ হিসেবে বাস্তবায়িত হবেই। সেই লক্ষ্যে তিনি প্রস্তাবিত চলনবিল জেলার ভৌগলিক ম্যাপ এবং বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরী করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দিনের পর দিন যুদ্ধ করেছেন। তার রেখে যাওয়া প্রজন্ম আজও আন্দোলন করে যাচ্ছে। এম এ হামিদ প্রকৃতই ছিলেন চলনবিলের ‘ ধ্রুব তারা’।

অধ্যক্ষ সরদার আবদুল হামিদ চলনবিল জেলা গঠনের প্রস্তাবনা করেছিলেন। তার প্রস্তাবিত চলনবিল জেলায় আটটি উপজেলা স্থান পায়। নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া, পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ (সলঙ্গা)। এছাড়াও বগুড়ার নন্দীগ্রামের একটা অংশের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। চলনবিল জেলা গঠনের প্রস্তাবনার আজো বাস্তবায়ন হয়নি। চলনবিল জেলা গঠন চলনবিলের মানুষের প্রাণের দাবি। আজ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চলনবিলের সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হচ্ছে। চলবিলের বাস্তুসংস্থান ধ্বংস হচ্ছে, মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, মানুষ জীবন-জীবিকার পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। নদী দূষণ ঘটছে, নদীর গতিতে পরিবর্তন হচ্ছে, জমিতে অপরিকল্পিত সার-কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে সুদূরপ্রসারিত প্রভাব পড়ছে। বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার কেউ কি আছেন? চলনবিলের আরো হাজার সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য আজ অধ্যক্ষ হামিদের মতো মানুষের বড় প্রয়োজন।

মৃত্যু

অধ্যক্ষ এম. এ. হামিদ ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৬ সালে সবকিছু ছেড়ে পরপারে চলে যান। মৃত্যুর আগে স্ট্রোক করে চার বছর প্যারালাইজড অবস্থায় ছিলেন। এই চার বছর শহরের বাড়ি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন। উদ্দেশ্য গ্রামের মানুষের কাছে শেষ সময়টা পার করা। সে সময় গ্রামের মানুষ পীর দরবেশের মত তার সেবা করেছেন। তাঁদের একটাই কথা ছিল চলনবিলের রত্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে।উনি চলে গেলে কে আর আমাদের জন্য করবে?

মারা যাওয়ার পর তিনদিন এলাকায় শোক দিবস পালিত হয়েছে। থানা থেকে গ্রামে আসার রাস্তাটি তার নামে নামকরন করা হয়েছে।এলাকাবাসী তাঁকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছেন।সে বই এ সবার স্মৃতিকথা লিখেছেন।আরও লিখেছেন কে কি উপকার পেয়েছেন সেসব সবিস্তারে। তাঁদের লেখা পড়লে চোখ পানিতে ভরে যায়। মনে হয় তাকে আমরা খুব কমই জেনেছি। এখন সবার লিখনিতে নতুন করে আবিস্কার করছি যেন তাকে, তার স্বপ্নকে।

তিনি ধার্মিক মন মানসিকতার ছিলেন। জীবদ্দশায় দুইবার হজ্বব্রত পালন করেন। এতসত্ত্বেও আধুনিক মনের অধিকারী ছিলেন। ছেলে সন্তান নেই জন্য কখনও আফসোস করতেন না। বরং মেয়েদের ছেলের মত মানুষ করেছেন। যে বাবার কাঁধে এতগুলো কন্যা সন্তান, সে বাবা চাইলেই কলেজ ভার্সিটিতে পড়াকালীন সুপাত্র পেলে বিয়ে দিয়ে দায়িত্ব মুক্ত হতে পারতেন। কিন্তু মেয়েদের সুশিক্ষিত করে মানুষ করেছেন। আজ দেশ বিদেশে মেয়েদের প্রায় সবাই প্রতিষ্ঠিত তা একমাত্র তার আধুনিক ও দৃঢ় মনোবলের কারণেই সম্ভব হয়েছে এসব। আসলেই তিনি ছিলেন গর্ব করবার মত ব্যক্তিত্ব, ছিলেন প্রচার বিমুখ। তিনি অমর তার কাজের মাধ্যমে।

নাটোরবাসীর জন্য মোবাইল অ্যাপ

স্মার্টফোনে জেলার প্রয়োজনীয় সকল তথ্য প্রাপ্তির কথা বিবেচনায় নাটোরবাসীর জন্য আমরা তৈরি করেছি Smart Natore Online Seba নামের একটি মোবাইল অ্যাপ। এখানে জেলার পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে ।
আগামীতে পড়াশোনা, ফ্রিল্যান্সিং এবং ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক রিসোর্স আসবে এই অ্যাপেঅ্যাপটি আমাদের প্রাণের নাটোরের জন্য নিবেদিত। আশা করছি আপনারা অ্যাপটি ডাউনলোড করে সাজেশন দিবেন আর কোন কোন তথ্য, সার্ভিস, রিসোর্স যোগ করা যায়। আপনাদের সাজেশন অনুযায়ী আগামীতে নতুন নতুন ফিচার হালনাগাদ করা হবে। অ্যাপের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স জানাতেও ভুলবেন না ।
Google Play Store এ গিয়ে “Smart Natore Online Seba” দিয়ে সার্চ করে পাবেন। তবে, খুঁজতে না চাইলে নিচের লিংক থেকেও সরাসরি ইন্সটল করতে পারেন।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.nator.natorzelaonlineseba
সম্ভব হলে শেয়ার করে আপনার নাটোরের পরিচিত, আত্মীয়, বন্ধুদের অবহিত করতে পারেন। এতে একদিকে অধিক পরিমাণে সাজেশন পেয়ে দ্রুত সমৃদ্ধ করা যাবে Smart Natore Online Seba অ্যাপটি, অন্যদিকে অধিক সংখ্যক নাটোরবাসী এই এপের মাধ্যমে সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। আগামীর প্রযুক্তিময় দিনে স্মার্ট নাটোরবাসী এগিয়ে থাক সকল ক্ষেত্রে, এই প্রত্যাশা রইলো। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে ই-মেইল করুন[email protected]

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *