এক নজরে নাটোর

 ১৮২৯ সালে নাটোরকে মহকুমায় পরিণত করা হয়। মিঃ এলফিল্টোন জ্যাকসন প্রথম মহকুমা অধিকর্তা হিসেবে কাজ করেন এবং সে সময় হতে বৃটিশ ভারতের শেষ অবধি, সমগ্র পাকিস্তানী আমল এবং বাংলাদেশের ১৯৮২ সালের পূর্ব পর্যন্ত নাটোর মহকুমা হিসেবেই গণ্য ছিল। ১৯৮২ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে পুরাতন মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয় এবং ১৯৮৪ সালে ৭৩৭ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে নাটোর জেলার যাত্রা শুরু হয়।

৪ই ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ সালে জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়। ৭টি উপজেলা, ৮টি পৌরসভা, ৫২টি ইউনিয়ন ও ১,৪৩৪ গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত। ১৭ লাখের অধিক মানুষ এ অঞ্চলে বসবাস করে।

নাটোর জেলার অবস্থান

কবির কল্পনায় নাটোর অমর হয়ে আছে কাব্যে। প্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐশ্বর্য্য মন্ডিত বরেন্দ্র ভূমি সংলগ্ন নাটোর জেলা।  ১,৮৯৬.০৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নাটোর দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জেলা যার উত্তরে বগুড়া , পূর্বে সিরাজগঞ্জ, দক্ষিণে পাবনা, পশ্চিমে রাজশাহী এবং উত্তর পশ্চিমের কিছু অংশ নওগাঁ দ্বারা পরিবেষ্টিত। নাটোর শহরটি ২৪.২৬ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৯ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নারদ নদের উত্তর তীরে অবস্থিত।

চলুন সংক্ষেপে নাটোর জেলার সব তথ্য জেনে নেইঃ

আয়তন ১,৮৯৬.০৫ বর্গ কিলোমিটার 

জনসংখ্যা(২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)- ১৭,০৬,৬৭৩ জন; 

পুরুষ ৮,৫৪,১৮৩ জন, মহিলা ৮,৫২,৪৯০ জন,

মুসলিম ১৫,৯০,৯১৯ জন (৯৩.২২%), হিন্দু ১,০৩,৭৪৭ জন (৬.০৮%), খ্রিস্টান ৮,০৫৮ জন (০.৪৭%), বৌদ্ধ ৭ জন (০.০০%), অন্যান্য ৩,৯৪৬ জন (০.২৩%), বার্ষিক জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ১.৪০%,

নির্বাচনী এলাকা ০৪টি; (৫৮) নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া), (৫৯) নাটোর-২ (নাটোর সদর – নলডাঙ্গা), (৬০) নাটোর-৩ (সিংড়া), (৬১) নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) 

উপজেলা ০৭টি; নাটোর সদর, সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর, বাগাতিপাড়া, নলডাঙ্গা 

থানা ০৭টি; নাটোর সদর, সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর, বাগাতিপাড়া, নলডাঙ্গা 

পৌরসভা-০৮টি; নাটোর (ক-শ্রেণী), সিংড়া (ক-শ্রেণী), গুরুদাসপুর (ক-শ্রেণী), বড়াইগ্রাম (খ-শ্রেণী), বনপাড়া (গ-শ্রেণী), গোপালপুর (গ-শ্রেণী), বাগাতিপাড়া (গ-শ্রেণী), নলডাঙ্গা (গ-শ্রেণী) 

ইউনিয়ন- ৫২টি; নাটোর সদর-৭টি, সিংড়া-১২টি, গুরুদাসপুর-৬টি, বড়াইগ্রাম-৭টি, লালপুর-১০টি, বাগাতিপাড়া-৫টি, নলডাঙ্গা-৫ টি 

গ্রাম-১,৪৩৪টি, মৌজা-১,২৬৫টি 

স্কুল প্রাথমিক বিদ্যালয় (সরকারি ও বেসরকারি)-৬৫৮টি, নিম্ন মাধ্যমিক-৬৩টি, মাধ্যমিক-২৫৮টি, দাখিল মাদ্রাসা-১২১টি, কমিউনিটি বিদ্যালয়-৩৭টি কলেজসরকারি ও বেসরকারি-১০৬টি, মাদ্রাসা (আলিম, ফাজিল, কামিল)-২৬টি 

নদ-নদী নন্দকুঁজা, বারনই, গোধাই, বড়াল, গুনাই, নারদ নদ 

বদ্ধ জলমহাল-৬৬৯টি (২০ একরের উর্ধ্বে ও অনুর্ধ্ব ২০ একর), উন্মুক্ত জলমহাল-১৪টি 

হাট বাজার ১৭০টি 

মোট জমিফসলী জমি ৩,০১,৮৫৬ হেক্টর মোট আবাদি জমি ১,৫০,৮৩৮ হেক্টর, এক ফসলী ৩৪,৬৭৫ হেক্টর, দুই ফসলী ৮১,৫১৫ হেক্টর, তিন ফসলী ৩৪,৪৪১ হেক্টর 

ইউনিয়ন ভূমি অফিস-৫২টি 

আবাসন/আশ্রায়ন প্রকল্প-০৯টি, আদর্শ গ্রাম-২৮টি, 

খেয়াঘাট/নৌকাঘাট-১১টি 

জেলা হাসপাতাল ০১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ০৫টি, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৩০টি, ইউনিয়ন সাব সেন্টার ১৫টি, কমিউনিটি ক্লিনিকট ১৫৯টি, বেসরকারি ক্লিনিক ৪৩টি 

দর্শণীয় স্থান– দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী (উত্তরা গণভবন), নাটোর রাজবাড়ী, চৌগ্রাম জমিদার বাড়ী, চলন বিল, চাপিলা শাহী মসজিদ, দয়ারামপুর রাজবাড়ি, ফকিরচাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাইজির আশ্রম, শহীদ সাগর, হালতি বিল, চলনবিল জাদুঘর, গ্রীন ভ্যালী পার্ক, তিশিখালি মাজার, সমসখলসীর পাখি গ্রাম, খোলাবাড়িয়া ঔষধি গ্রাম ইত্যাদি।

সম্ভাবনীয় ক্ষেত্র- পর্যটন। রাণী ভবানীর রাজবাড়ী, উত্তরা গণভবন, চলনবিল, হালতির বিল এবং অন্যান্য দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থাপনা নিয়ে পর্যটন জোন গড়ে তোলা গেলে তা এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে । 

উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- নবাব সিরাজ উদ-দৌলা সরকারি কলেজ, রাণী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজ, দিঘাপতিয়া এম.কে ডিগ্রী কলেজ, কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহারাজা জে.এন উচ্চ বিদ্যালয়। 

জেলা কারাগার-০১টি এনজিও-৬৪টি 

যোগাযোগ ব্যবস্থা-সড়ক ও রেলপথ 

প্রেস ক্লাব-০১টি; জেলা প্রেস ক্লাব, নাটোর 

সেনাবাহিনী ব্রিগেড-কাদিরাবাদ সেনানিবাস (ইঞ্জিনিয়ারিং কোর), দয়ারামপুর, বাগাতিপাড়া  মোট ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেদ্রের সংখ্যা৫২ টি বিসিসি কর্তৃক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা-৪২ টি 

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান

নাটোরের লোকজ সংস্কৃতির ভান্ডার সমৃদ্ধ, বৈচিত্র্য অফুরন্ত। যে কোনো প্রাচীন জনপদ সচরাচর লোকসংস্কৃতিতে ধনী হয়ে থাকে। নাটোর জেলাও তার ব্যতিক্রম নয়। নাটোরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বেশ সমৃদ্ধশালী, এই ছোট্ট শহরটিতে নিরন্তন সাংস্কৃতিক চর্চা অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত রেখেছে নিজেদের। নানা সমস্যা ও প্রতিকুলতার মধ্যেও দীর্ঘদিন যাবত কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থেকেছে, উত্তরোত্তর এগিয়ে যেতে চেয়েছে উৎকর্ষতার দিকে। নাটোরের অনেক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো ঐকান্তিক ভালবাসায় নীরবে কাজ করছে কিন্তু রয়ে গেছে পরিচিতির বাইরে। আমরা চাই সেগুলো আপনাদের সামনে আসুক সম্ভাবনায়, স্বমহীমায়:

  • জেলা শিল্পকলা একাডেমী (১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ললিতকলা একাডেমী পরিবর্তিত হয়ে শিল্পকলা একাডেমী নামে পরিচিত)
  • মনোবীণা সংঘ (১৯৬৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত)
  • সাকাম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান (১৯৭২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত)
  • নাটোর সংগীত বিদ্যালয় (১৯৮৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত)
  • উষা খেলাঘর আসর (১৯৮৯ সালের ৫ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত)
  • ভোলামন বাউল সংগঠন (১৯৯৬ সালের ১৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত)
  • ইছলাবাড়ী বাউল সংগঠন (২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত)
  • নৃত্যাঙ্গন (১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত)
  • ডিং ডং ড্যান্স ক্লাব (২০০৩ সালের ১ মার্চ প্রতিষ্ঠিত)
  • দিব্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান (২০০৬ সালের ৬ মে প্রতিষ্ঠিত)
  • স্মৃতি নৃত্য (২০০৭ সালের ১৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত)
  • সারেগামা
  • সুরের ছোঁয়া
  • ঝংকার নৃত্য গোষ্ঠি
  • সুপারস্টার ড্যান্স ক্লাব
  • বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ
  • ইংগিত থিয়েটার ইত্যাদি 

নাটোর মডেল বই ও জেলা ব্র্যান্ডবুক

নাটোর জেলার বিস্তারিত তথ্যভাণ্ডার হতে পারে নাটোর মডেল বই ও জেলা ব্র্যান্ডবুক।

নাটোর জেলা ব্র্যান্ডবুক

সরকার বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে ভিশন-২০২১ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে ভিশন-২০৪১ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ বিবিধ পরিকল্পনা। জেলা ব্র্যান্ডিং এ সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। জেলা ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে প্রতিটি জেলার গৌরব ও ঐতিহ্য দেশে ও বিদেশে তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে, এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সঠিক পরিচয় ফুটে উঠছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জেলাসমূহের মধ্যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সমৃদ্ধ নাটোর অন্যতম। রানী ভবানীর স্মৃতিবিজড়িত এই জেলার সর্বত্র রয়েছে রাজকীয়তার ছাপ। নয়নাভিরাম দৃশ্য ও ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির কারণে অতুলনীয় এই ‘রাজসিক নাটোর’ ।

অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উত্তরা গণভবন ও রানী ভবানীর রাজবাড়ি। এছাড়াও রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাঁচাগোলা। শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নয় নাটোরের রয়েছে সীমাহীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলের অবস্থান এই নাটোরে। রয়েছে হালতি বিল, পাটুল সহ অন্যান্য বিল। চলনবিল শুধু সৌন্দর্যের লীলাভূমিই নয় এখানে রয়েছে হরেক প্রজাতির মাছ, জলজ প্রাণী। এছাড়াও নাটোরে রয়েছে পাখির গ্রাম ও ঔষধি গ্রাম।

অসাধারণ সৌন্দর্যের কারণে নাটোর মুগ্ধ করেছে কবি সাহিত্যিকদের। কবিতায় বার বার এসেছে নাটোরের নাম। সৌন্দর্যপ্রেমী পর্যটকরা নাটোরে পেতে পারেন প্রশান্তি।

নাটোরের এসব ঐতিহ্য, সৌন্দর্য, আর সম্পদের উপস্থাপনা রয়েছে ‘রাজসিক নাটোর’ নামে জেলা ব্র্যান্ডবুকের প্রতিটি পাতায় পাতায়।

নাটোর মডেল বই

জেলা পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন নিঃসন্দেহে একটি সাহসী ও ব্যতিক্রমী প্রয়াস। জেলার সকল বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এ ধরনের উদ্যোগ সম্ভবত নাটোরেই প্রথম । সঙ্গত কারণেই পরিকল্পনা তৈরির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের জন্য পূর্বে জেলার সাংসদবর্গ, নাগরিকসমাজ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে পর্যায়ক্রমে মতবিনিময় করা হয়। সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া যায়। এরপর অংশীজনদের সাথে একাধিক বৈঠকে পরিকল্পনার সম্ভাব্য কাঠামো ও তৈরি প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। শুরু হয় তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম।

প্রথমদিকে অংশীজনদের নিকট হতে কাঙ্ক্ষিত ও মানসম্পন্ন তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। পরে তাঁদের নিয়ে আয়োজিত একাধিক কর্মশালা ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সৃষ্ট অস্পষ্টতা দূর করায় তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হয়। সংগৃহীত তথ্যের সঠিকতা ও অস্পষ্টতা যাচাইয়ের সবচেয়ে কার্যকর প্ল্যাটফরম ছিল জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা।

নাটোর জেলা কর্মপরিকল্পনায় মোট ৩৬টি মন্ত্রণালয়ের অধীন ৬৩টি জেলা পর্যায়ের সরকারি অফিস, ১৬টি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান (জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ) এবং ৭টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় অংশ নিয়েছে। জেলার ৮৬টি দপ্তরের নিকট থেকে একই ফরম্যাটে মানসম্পন্ন ও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ বিপুল পরিমাণ তথ্য যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত ছকে বিন্যাস করা এবং লেখচিত্রের মাধ্যমে তুলনামূলক উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। বিভাগভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার প্রতিটি কার্যক্রমের সাথে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০-এর সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার সংশ্লিষ্টতা চিহ্নিত এবং সংশ্লিষ্ট এসডিজি সূচকের বিপরীতে জাতীয় লক্ষ্যমাত্রার সংযোগ দেখানো হয়েছে। জাতীয় পরিকল্পনা দলিলের সাথে সামঞ্জস্য থাকায় পরবর্তীকালে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে। উপস্থাপিত

তথ্য ও উপাত্ত চূড়ান্তভাবে যাচাই ও নিরীক্ষা করার জন্য তথ্য সরবরাহকারী সকল বিভাগের সাথে কর্মশালা করা হয়। অতঃপর প্রয়োজনীয় পরিমার্জনও সম্পাদনা শেষে তৈরি করা হয় খসড়া পরিকল্পনা। এই খসড়া মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রীসহ জেলার সকল সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে সেমিনারে উপস্থাপনপূর্বক তাঁদের মতামত গ্রহণ করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে প্রাপ্ত সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণসমূহও বইতে সন্নিবেশ করা হয়। অতঃপর জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন গ্রহণ করা হয়, প্রকাশ করা হয় নাটোর জেলার এ অসামান্য দলিল-নাটোর মডেল বই

সমাপনী

ভারতবর্ষের ইতিহাসে নাটোর একটি বিশিষ্ট স্থানের নাম । এই নাম তার শাসকশ্রেণী এবং তার অধিবাসীদের জীবনসংগ্রাম আর সংস্কৃতির কারণেই ইতিহাস বিখ্যাত । পাঠান-মোঘল-ইংরেজ এমনকি পাকিস্তানি দুঃশাসনের ইতিহাসে যুগে যুগে শোষণ বঞ্চণা আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আত্ম অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে । ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর সাম্প্রদায়িক শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন , ৬৬ এর ছয় দফার সমর্থনে আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান এবং ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে নাটোরবাসির অবদান দেশের অপরাপর জেলাগুলোর চেয়ে কম নয় । সে কারণে নাটোর ঐতিহাসিকভাবে শুধু ভারতবর্ষের ইতিহাসেই নয়, সভ্য দুনিয়ার সকল দেশে তার স্বতন্ত্র্য পরিচিতি আছে ।

উত্তরবঙ্গের সবগুলো শহরের মধ্যে গৌড় বাদে নাটোরই সবচেয়ে প্রাচীন শহর। বর্তমানের বিভাগীয় শহর রাজশাহীর নামও অজ্ঞাত ছিল কিন্তু সে সময় নাটোর শহর ছিল গৌরবের শীর্ষে অবস্থিত। ঢাকা, মুর্শিদাবাদ ও কৃষ্ণ নগরের সমকক্ষ ছিল নাটোর।

পূর্বে রাজশাহী জেলার আয়তন ছিল ব্যাপক ও বিস্তৃত। পাবনা, রাজশাহী বগুড়া, রংপুর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও যশোর জেলার কিয়াদাংশ নিয়ে ছিল রাজশাহীর পূর্বাংশ। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান, নদীয়া ও অন্য এলাকা নিয়ে ছিল পশ্চিমাংশ যা নিজ রাজশাহী নামে পরিচিত। পূর্বাংশ ও পশ্চিমাংশ নিয়ে ছিল সমগ্র রাজশাহী জেলা এবং এর আয়তন ছিল ১২,৯৯৯ বর্গমাইল। সমগ্র রাজশাহীর শাসনব্যবস্থা নাটোর থেকে পরিচালিত হতো এর প্রধান কারণ হল রাণী ভবানীর জমিদারীর রাজধানী ছিল নাটোর।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *