সমর পাল | ঐতিহ্য-গবেষণার প্রাণপুরুষ

আজ ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ । ১৯৫২ সালের আজকের এই শীতের চাদরে ঢেকে থাকা দিনেই নাটোর শহরের পালপাড়ায় প্রয়াত প্রতাপচন্দ্র পাল ও মা সিদ্ধেশ্বরী পালের ঘর আলোকিত করে পৃথিবীতে আগমণ ঘটে এক বালকের। কালের পরিক্রমায় তিনি আপন আলোর দ্যূতি ছড়াতে থাকেন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আন্তরিকতা, মেধা, দক্ষতা , সৃষ্টিশীলতায় সমৃদ্ধ করেছেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, জাতীয় জাদুঘর, সরকারি কর্মকমিশন । আর আপন মহিমায় স্বপ্ন বুনে যাচ্ছেন লাখো মানুষের হৃদয়ে। তবে, সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন ইতিহাস ও ঐতিহ্য গবেষক হিসেবে সমধিক পরিচিত। সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরে চলেছেন নাটোর, উত্তরবঙ্গ এবং বাংলাদেশের সঠিক ও সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য-তথ্য।

হ্যাঁ, আমরা ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর নাটোর শহরে জন্মগ্রহণকারী ঐতিহ্য-গবেষক সমর চন্দ্র পালের কথাই বলছি। পরিসংখ্যানের ছাত্র হয়েও ঐতিহ্য-চর্চা ও জাতীয় বােধের বিকাশে অনন্য সাধক হিসেবে আদৃত সকল মহলে। তার নিষ্ঠা, একাগ্রতা, নানা ভাষার জ্ঞান ও সাধনা আমাদের জাতীয় গৌরব অন্বেষায় বিপুল আশার সঞ্চার করেছে ।

ইতিহাস ও সাহিত্য চর্চার জন্য পেয়েছেন অনেক সম্মাননা ও পদক। পেশাগত কারণে এবং জ্ঞান অন্বেষণে ভ্রমণ করেছেন ভারত, নেপাল, জাপান, ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম । তাছাড়া, বাংলাদেশের নানা ঐতিহ্যবাহী জনপদ ঘুরে ঘুরে তিনি কুড়িয়ে যাচ্ছেন বাংলার মণিমুক্তা। আমাদের আজকের লেখায় উপস্থাপিত হবে নাটোর তথা বাংলার গর্ব, ঐতিহ্য-গবেষক সমর পালের জীবনচিত্র।

সমর পালের জন্ম ও পরিবার

সমর পালের জন্ম ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোর শহরের পালপাড়ায় । প্রয়াত শিক্ষক প্রতাপচন্দ্র পাল (১৯২০-১৩.১২.২০০৪ খ্রি.) ও সিদ্ধেশ্বরী পালের (১৯২৮-২১.১২.২০১৫) ৫ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান সমর পাল। তার বাবা প্রতাপচন্দ্র পাল ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী। তিনি বনবেলঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। পিতামহ বৃন্দাবনচন্দ্র পালও (১৮৮১-১৯৬৬ খ্রি.) ছিলেন একজন ইতিহাস-ঐতিহ্য সচেতন ব্যক্তি। মূলত, তার সংগৃহীত গ্রন্থসম্ভার থেকে বই পড়ে বাল্যকালেই সমর পালের মনে জাগ্রত হয় ইতিহাস-ঐতিহ্য সংক্রান্ত বিষয়ে
জানান্বেষণের আগ্রহ, আর সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা।

তিনি দুই পুত্র-সন্তানের জনক। স্ত্রী দেবী পাল, দুই সন্তান-অর্ণব ও দীপ্র এবং পুত্রবধূ অনামিকাকে নিয়ে তার সাদামাটা সংসার ।

পড়াশোনা

শৈশব থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন সমর পাল। পিতা-মাতার তত্ত্বাবধানে সমর পালের শিক্ষাজীবনের সূচনা তার নিজগৃহে। স্কুলজীবন শুরু হয় তার পিতার কর্মস্থল নাটোরের বনবেলঘড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৬২ সালে তিনি ছিলেন বনবেলঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। উক্ত বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালের জানুয়ারি মাসে স্কলারশিপ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধাবৃত্তি লাভ করেন তিনি।

এরপর তিনি ভর্তি হন নাটোর মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ হাইস্কুলে। সেখানেও সমর পাল কৃতিত্বের পরিচয় দিতে সক্ষম হন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি জুনিয়রবৃত্তি লাভ করেন এবং প্রথম বিভাগ পেয়ে ১৯৬৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন ।

এস, এস.সি পাস করার পর নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা কলেজ, নাটোরে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৭০ সালে আইএসসি (বিজ্ঞান) প্রথম বিভাগে পাশ করেন। ।

তারপর রাজশাহী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে উচ্চশিক্ষা শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিষয়ে (১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত ১৯৭৫) বি,এ (অনার্স) এবং (১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত ১৯৭৬) এম, এ ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় পরীক্ষাতেই তিনি উচ্চতর দ্বিতীয় শ্ৰেণী পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

বিতর্ক

সমর পাল শৈশব থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র, চৌকষ বিতর্কপ্রেমী। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জিতেছেন প্রচুর প্রসংশা ও পদক। সেই ধারাবাহিকতায়ই তিনি অনেক ভুল ইতিহাসের সঠিক তথ্য উদঘাটন করেছেন।

কর্মজীবন

শিক্ষাপর্ব শেষে শুরু হয় তার কর্মজীবন। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ঢাকায় তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগে ফেলো হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
তারপর ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ঢাকাস্থ দিলকুশায় বাংলাদেশ কৃষিউন্নয়ন
কর্পোরেশনের পরিকল্পনা বিভাগে পরিসংখ্যানবিদ হিসেবে যোগদান করেন। সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষা ১৯৭৯ পাস করে ১৯৮১ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্রের কর্মে সহকারী কমিশনার হিসেবে প্রশাসনে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে আসীন ছিলেন।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এপ্রিল-২০০৭ থেকে ফেব্রুয়ারি-২০০৯ পর্যন্ত সময়কালে। এসময় তিনি ইতিহাস ও ঐতিহ্য গবেষণায় অধিক সুযোগ ও উৎসাহ পান।

২৫.৪.২০১৩ তারিখে তিনি সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ গ্রহণ। সরকারি কর্মীবাহিনীতে যোগ্য নেতৃত্বদানে সক্ষম জনবল নিয়োগে ভূমিকা রাখেন। ০১.০১.২০১৮ তারিখ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্যপদে সুনাম ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন যাপন করছেন। তবে, থেমে নেই তার কলম কিংবা মোবাইল ও কম্পিউটারের কীবোর্ড, লিখে চলেছেন ইতিহাসের কথা, সোনালি অতীতের কথা, ভুলের গতিপথ থামিয়ে সঠিক তথ্য। সমানতালে চলছে তার সচেতনতামূলক, চাকরির প্রস্তুতিমূলক, গবেষণামূলক, স্মৃতিচারণমূলক অবদান-লেখায়, কথায়, চিন্তায়।

সাহিত্য ও গবেষণা

পারিবারিক পরিসরে জ্ঞান ও বইয়ের অনুকূল পরিবেশ পেয়ে বাল্যকালেই সমর পালের মনে জাগ্রত হয় সাহিত্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য সংক্রান্ত বিষয়ে জানার আগ্রহ।

তাইতো, পরিসংখ্যানের ছাত্র হয়েও সমর পাল যৌবনকাল থেকেই ঐতিহ্য-চর্চা ও জাতীয় বােধের বিকাশে অনন্য সাধক হিসেবে আদৃত সকল মহলে। তার নিষ্ঠা, একাগ্রতা, নানা ভাষার জ্ঞান ও সাধনা আমাদের জাতীয় গৌরব অন্বেষায় বিপুল আশার সঞ্চার করেছে ।

শৈশব থেকেই অত্যন্ত মেধাবী সমর পাল । সরকারি চাকুরির সৌজন্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল। ইতিহাস-সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে তাঁর রয়েছে নাড়ির টান। যেখানেই গিয়েছেন ইতিহাস-সংস্কৃতির শেকড় সন্ধান করেছেন।

সমর পালের প্রকাশিত বই সংখ্যা প্রায় চল্লিশ। তবে, তার বাইরেও দেশ-বিদেশের নানা পত্র পত্রিকায় তার অসংখ্য নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, ইতিহাস-ঐতিহ্যের হাজারো জট খুলে জয় করেছে পাঠক হৃদয়। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে কয়েকটি বই প্রকাশনীসহ নিচে উল্লেখ করা হলো –

  • শোভা প্রকাশ : ১.বরেন্দ্রভূমির সাহিত্য – প্রাচীন যুগ। ২. উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য। ৩. উত্তর জনপদে লোকসংস্কৃতির আঙিনায়। ৪. অনাদৃত অধ্যায়। ৫. নাটোরের কবি রাধাচরণ চক্রবর্তী। ৬. পদবির উৎসসন্ধান। ৭. প্রবাদের উৎসসন্ধান। ৮. কীর্তিমান লেখক : ছদ্মনাম : গুপ্তনাম : সুপ্তনাম : লুপ্তনাম। ৯. বরেন্দ্রভূমির ইতিহাস। ১০. রগোপাল দাসকুণ্ডুর পৌণ্ড্রবর্দ্ধন ও করতোয়া। ১১. মুন্সি মহাম্মদ আপ্তাবউদ্দিন মিয়া তালুকদারের পায়রাবন্দ কাহিনী।
  • ম্যাগনাম ওপাস : ১. রঙ্গপুরের জাগের গান । ২. ধর্মকথা ।
  • গতিধারা : ১. নাটোরের ইতিহাস। ২. তাহিরপুর রাজবংশ।
  • হাতে খড়ি : ব্রিটিশ ভারতে সংবাদপত্র দলন।
  • হাক্কানী পাবলিশার্স : কৈবর্ত জাগরণ।
  • জ্যোতি প্রকাশ : শিল্পের জয়চিহ্ন – ঢাকার মসলিন।
  • কালিকলম প্রকাশনা : প্রসঙ্গ – গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার ।
  • আল হামরা প্রকাশনী : প্রত্নকথা।

প্রকাশনী ও লাইব্রেরির বাইরেও রকমারি.কম হতে অনায়াসেই ঘরে বসে তার বই সংগ্রহ করতে পারেন।

ভাষা

সমর পাল ইতিহাস ও ঐতিহ্য গবেষক হিসেবে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। গবেষণার প্রয়োজনে তিনি অনেক শ্রমসাধ্য ও অসাধ্য সাধন করেছেন, যেন সঠিক ইতিহাস উন্মোচনের প্রেমে পরেছিলেন তিনি। গবেষণায় ভাষাগত জটিলতা দূর করতে তিনি বাংলা, ইংরেজি ছাড়াও শিখেছিলেন সংস্কৃত, পালি, রুশ, হিন্দি, আরবি ও ফারসি ভাষা। তবে, এখন হয়তো অতটা চর্চা করা হয় না, চর্চার অভাবে হয়তো ভুলেও গেছেন ওসব ভাষার অনেকটা । ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় ভালোবাসার জন্য হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে লাল কাপড় বেঁধেছিলেন, ‘বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে’ ১০৮টি নীলপদ্ম খুঁজে এনেছিলেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়; তবুও নাকি কথা রাখেনি বরুণা। কিন্তু সমর পালের ভিনদেশি ভাষাপ্রেম তাকে গবেষণার কাজে প্রচুর সুবিধা দিয়েছে তা সুনিশ্চিত। ভাষা জানার ফলে ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বূঝতে ও তুলে ধরতে তার মুন্সিয়ানা সমৃদ্ধ হয়েছে।

সদস্যপদ

সমর পাল বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, পরিসংখ্যান সমিতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান সমিতি, বাংলা একাডেমি, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের জীবন-সদস্য ।

ভ্রমণ

সমর পাল ভ্রমণ করেছেন ভারত, নেপাল, জাপান, ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশের নানা ঐতিহ্যবাহী জনপদ। সরকারি চাকুরির সৌজন্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল। ইতিহাস-সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে তাঁর রয়েছে নাড়ির টান। যেখানেই গিয়েছেন ইতিহাস-সংস্কৃতির শেকড় সন্ধান করেছেন। উন্নয়নে সচেষ্ট ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার প্রতিষ্ঠান ও ইতিহাসের।

তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তিনি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়াতে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সের প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ৭ বছর থেকে বন্ধ রাখা এ কেন্দ্রটি অনেক কষ্টে চালু করে নিয়মিত করার কাজে সরকারের সুদৃষ্টি লাভে সমর্থ হন। বেতনহীন প্রশিক্ষকগণের চাকরি নিয়মিতকরণ ও সম্পদ রক্ষার জন্য সকল ধকল ও বাধা ছিল তা থেকে উত্তরণ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

সম্মাননা

  1. ইতিহাস ও সাহিত্য কর্মে অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে পশ্চিম বঙ্গের শিলিগুড়িতে দার্জিলিং জেলা গ্রন্থমেলা কর্তৃক সংবর্ধিত হন।
  2. ২০০০ সালে রংপুর জেলা থেকে ইতিহাস গ্রন্থে অবদানের জন্য স্মারক সম্মান লাভ করেন।
  3. ২০০৬ খ্রিঃ এ ময়মনসিংহ লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি কেন্দ্র থেকে ইতিহাস গবেষণার জন্য সংবর্ধনা ও সম্মাননা লাভ করেন।
  4. ২০০৮ সালে নাটোরের ভিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরি থেকে মহারানী ভবানী পদক লাভ করেন।
  5. নাটোর উৎসব, ঢাকা কর্তৃক ১৯.১২.২০১৪ তারিখে সাহিত্যে অবদানের জন্য সম্মাননা লাভ করেন।
  6. নাটোর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সৃজনশীল সাংস্কৃতিক গবেষক হিসেবে ২০১৯ সালের জন্য পদক ও সম্মাননা লাভ করেন। ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নাটোর শহরের রাজবাড়ী আনন্দ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১১টি ক্যাটাগরিতে মোট ২০ জন গুনী শিল্পীকে শিল্প ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
  7. ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী এসোসিয়েশন কর্তৃক ১৫ নভেম্বর ২০২২ তারিখে প্রদত্ত ’রাজশাহী এসোসিয়েশন পদক’ এ ভূষিত হন

সত্য ও শিকড় সন্ধান

সমর পাল মূলত বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া প্রত্নসম্পদ, নৃতত্ত্ব, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিস্তৃত স্থান ও ব্যক্তিত্ব, লোক সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করেছেন। তরণ প্রজন্মকে শেকড়-সন্ধানী হতে আগ্রহী করা এবং আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রকে প্রাগ্রসর করাই তাঁর লক্ষ্য।

তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভুল ইতিহাস ও তথ্য বিভ্রাট নিয়ে সোচ্চার থাকেন, প্রশ্ন তোলেন সত্য ও শিকড় সন্ধান করার উদ্দেশ্যে। গবেষকের প্রতি ক্রেডিট না দিয়ে নিজের নামে তথ্য প্রচারের ঘোর বিরোধী তিনি, ভাষা বিকৃতির বিপক্ষেও তার স্পষ্ট অবস্থান।

তাইতো তিনি লিখেন, ”ক্রিকেট নিয়ে আমরা অনেক কাহিনি কিংবদন্তি শুনি। তবে বাংলার ক্রিকেটের পুরোধা-পুরুষ জগদিন্দ্রনাথ ও সারদারঞ্জন আমাদের কাছে বিস্মৃত। আমরা তাদের কথা জানি না বললেই চলে। অথচ বাংলার ক্রিকেটের ইতিহাস তাদের কথা বাদ দিয়ে তৈরি হওয়াটা বিস্ময়কর মনে হয়। অথচ তাই হয়। তাই হচ্ছে। জগদিন্দ্রনাথের ক্রিকেট ও শরীরচর্চায় অবদান নিয়ে অনেক কথা বলা যায়।”

নাটোরের কাঁচাগোল্লার বিষয়ে লিখেন, ” নাটোরের কাঁচাগোল্লা ইদানীং এক আজগুবি গল্প শুনছি কাঁচাগোল্লার আবিষ্কার নিয়ে । যারা এ ধরনের বানোয়াট গল্প তৈরি করেন বা প্রচার করে মজা পান তারা যে সুস্থ মস্তিষ্কের নন তা বুঝতে বেগ পেতে হয় না । আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যে, নিরেট এই মিথ্যা তথ্য টেলিভিশন ও কাগজে প্রকাশিত হয়েছে ।”

গুণীদের বিষয়ে জানতে আগ্রহী করতে তিনি লিখেন ”সাহিত্যের এক অনন্য অভিভাবক নাটোরের মানুষের কাছে বিস্মৃত হয়ে থাকা আমাদের কাম্য হতে পারে না। এস এম আবদুল লতিফের জীবন ও কর্ম নিয়ে লেখা ও গবেষণার জন্য তরুণ প্রজন্মের কাছে আহ্বান জানাই। এস এম আবদুল লতিফ নাটোর তথা আমাদের সমাজের গর্ব। নাটোরের ইতিহাস চুরি করে নয়, খেটেখুটে গবেষণা করে লিখতে অনুরোধ করি।“

সমাপনী

সমর পালের মত গুণী ব্যক্তিত্বকে পুরোপুরি উপস্থাপন অসম্ভব। তবুও অল্প পরিসরে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও সম্পাদনার মাধ্যমে অধিকতর তথ্য সংযুক্ত করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। কোন বিষয়ে জানতে কিংবা কোন তথ্য সংযোজন ও সংশোধন করতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে আরও সমৃদ্ধ করুন নাটোর নিয়ে আমাদের প্রচেষ্টাকে।

নাটোরবাসীর জন্য মোবাইল অ্যাপ

স্মার্টফোনে জেলার প্রয়োজনীয় সকল তথ্য প্রাপ্তির কথা বিবেচনায় নাটোরবাসীর জন্য আমরা তৈরি করেছি Smart Natore Online Seba নামের একটি মোবাইল অ্যাপ। এখানে জেলার পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে ।
আগামীতে পড়াশোনা, ফ্রিল্যান্সিং এবং ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক রিসোর্স আসবে এই অ্যাপেঅ্যাপটি আমাদের প্রাণের নাটোরের জন্য নিবেদিত। আশা করছি আপনারা অ্যাপটি ডাউনলোড করে সাজেশন দিবেন আর কোন কোন তথ্য, সার্ভিস, রিসোর্স যোগ করা যায়। আপনাদের সাজেশন অনুযায়ী আগামীতে নতুন নতুন ফিচার হালনাগাদ করা হবে। অ্যাপের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স জানাতেও ভুলবেন না ।
Google Play Store এ গিয়ে “Smart Natore Online Seba” দিয়ে সার্চ করে পাবেন। তবে, খুঁজতে না চাইলে নিচের লিংক থেকেও সরাসরি ইন্সটল করতে পারেন।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.nator.natorzelaonlineseba
সম্ভব হলে শেয়ার করে আপনার নাটোরের পরিচিত, আত্মীয়, বন্ধুদের অবহিত করতে পারেন। এতে একদিকে অধিক পরিমাণে সাজেশন পেয়ে দ্রুত সমৃদ্ধ করা যাবে Smart Natore Online Seba অ্যাপটি, অন্যদিকে অধিক সংখ্যক নাটোরবাসী এই এপের মাধ্যমে সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। আগামীর প্রযুক্তিময় দিনে স্মার্ট নাটোরবাসী এগিয়ে থাক সকল ক্ষেত্রে, এই প্রত্যাশা রইলো। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে ই-মেইল করুন[email protected]

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *